Tuesday, September 1, 2015

নির্বাসিত

ঝর ঝর বরিষে বারিধারা।
হায় পথবাসী, হায় গতিহীন, হায় গৃহহারা।।

রবি ঠাকুরের এই ঝর বৃষ্টি, ঝিরি মেঘ-মাখা গানটির যে অন্য কোন আবেদন ও থাকতে পারে, ভাবিনি কোনদিন। কিন্ত চুর্নি গাঙ্গুলি পরিচালিত 'নির্বাসিত' ছায়া- ছবিটি দেখে যখন হল থেকে বেরলাম; মনে হল, একজন পথবাসী, গতিহীন, গৃহহারার কান্না যেন ঝর ঝর বারিধারা হয়ে ঝরে পড়ছে গোটা স্ক্রিন জুড়ে।
'তসলিমা নাসরিন'। এই আটটা অক্ষর  কানের ভিতর দিয়া মরমে প্রবেশ করলেই আমাদের মরম বেছে নেয় শুধু পঞ্চম অক্ষরটা - 'না'। তাঁর মাথা 'না' ঝোঁকানো,হার- 'না'- মানা মনোভাব ঐ একটি অক্ষরেই তসলিমার পরিচয়কে সীমাবদ্ধ করে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, 'নির্বাসিত' সিনেমায় আমি মূলতঃ চতুর্থ অক্ষরটাই চিনতে শিখলাম। 'মা' । একজন মায়ের গল্প এটা, যে মাকে তাঁর বিড়ালী কন্যার মাছের কাঁটা বাছা শেষ করতে না করতেই কলকাতা থেকে রাজস্থান, রাজস্থান থেকে রাজধানী, রাজধানী থেকে  দেশ ছাড়া হতে হয় এক কাপড়ে। কথায় বলে, মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি, কিন্তু সুইডেন শব্দটা কানে এলে আমাদের  বোধ হয় দূর সম্পর্কের বা গঙ্গা জলের সই পাতান মাসির কথাও  মনে পড়ে না। তবু সেই সুইডেন ই শেষ- পর্যন্ত দরদ দেখিয়ে বুকে টেনে নিল 'মা'কে আর মেয়ে (বিড়ালী; তবু বাঘিনী তার নাম, আসলে সে তার মায়েরই প্রতীক) পড়ে রইল কলকাতায় মায়ের এক বন্ধুর বাড়িতে নিতান্ত অবহেলায় অনাদরে। মা ফিরে যেতে চান, অথচ ফিরতে পারেন না। মেয়েকে ফিরে পেতে চাইলেও শুরু হয় রাজনৈতিক প্রহসন। মা মেয়ের এই আস্তিত্বিক সংগ্রামের নাম 'নির্বাসিত'। বড় বেদনাময় - মায়ের অচেনা বিদেশি খাবারের গন্ধে বমি উঠে আসা, একটা নিস্তরঙ্গ নির্জন দ্বীপে একলা পড়ে থাকা, না একলা নয়, সঙ্গী একজন সিকিউরিটি গার্ড আর তার বন্দুক, বেয়নেট। বিষণ্ণ হয়ে ওঠে মন, যখন মেয়ে না খেয়ে তার খাঁচায় ঘুমিয়ে পড়ে, বন্ধ বাথরুমে মাথা খুঁটে মরে। তবে কি জানেন তো, সিনেমাটা বিষণ্ণতা আর বিপন্নতায় মাখামাখি  হলেও শুধুই দর্শকের বুক ভারী করে; ভারাক্রান্ত করে না। এটাও পরিচালকের মুন্সিয়ানাই বলতে হবে। একটা সিনের চোখের জল পরবর্তী সিনের নির্মল হাস্যে মুছি্যে দেওয়া বড় সহজ কথা নয়।। অভিনয় নিয়ে আর কিই বা বলব? চুর্নি, কৌশিক, শ্বাশ্বত, রাইমা- আমরা সবারি অভিনয়-দক্ষতার সঙ্গে পরিচিত। রাজা নারায়ণ দেবের  সুর সঞ্চালন বিষম বেদনাকে বিমূর্ত করে তুলেছে পরম যত্নে। বিশেষ করে সমাপ্তি সুরমুর্ছনাটিতে আমার সোনার বাংলার সুরের সঙ্গে যে ভাবে পাশ্চাত্য সঙ্গীত- ধারার মিলন ঘটান হয়েছে, তাকে একটি সুরের রাখী বললেও অত্যুক্তি হবে না। স্থির-চিত্রের নির্দেশনাও প্রশংসার দাবি রাখে।
নির্বাসিত।
যখন বিয়ের দশ- দিন পরে গুরগাওতে ঘর করতে এলাম, চৌকাঠের বাইরের জগত টা সম্পূর্ণ অচেনা, চৌকাঠের ভেতরের মানুষটাও কি 'ভিতরের' ছিল ? কখনও ডাক ছেড়ে কেঁদেছি, কখনও আনমনে উষ্ণ প্রস্রবন গলে গলে পড়েছে নয়ন- গুহার থেকে। স্বপ্নে তখন হাঁটতে হাঁটতে দুই বোনে মিলে চলে যেতাম নন্দনে, কখনও বা আমি একাই জীবনানন্দ সভাঘরে বা আকাদেমিতে কবিতার পর কবিতা শুনতাম। বসন্ত এলেই গিয়ে দাঁড়াতাম আমার গানের স্কুলের উল্টো দিকে পলাশ- শিমুলের জট বাঁধা মাঠটায়। সারা বছর গাছগুলো দিব্যি ফুরফুরে মেজাজে গল্প করে কাটিয়ে দিত; কিন্তু বসন্ত এলেই তারা কঠিন অ্যানিমিয়ায় ভুগত। তাদের গায়ের যত রক্ত তারা বুক ফাটিয়ে বার করে দিত ডালে ডালে পাতায় পাতায়। তার উপর যখন সূর্যাস্তের  কমলা, গোলাপী, ফিরোজা, বেগুনী ঢলে পড়তো, মনে হতো আকাশই বুঝি হোরি খেলা খেলতে লেগেছে। ছায়াময় সূর্য যেন কৃষ্ণ আর গাছগুলোর মাথা - বিনোদিনীর কাঁটা মাড়িয়ে যাওয়া রক্তাক্ত বনপথ।
আরও কত হারিয়ে যাওয়া, ছাড়িয়ে যাওয়া, নাড়িয়ে যাওয়া স্মৃতি। মাঝেমধ্যেই
এসব কথা ভেবে নির্যাতিত হয়েছি মনে মনে, নিজেকে নির্বাসিত মনে করেছি ক্ষণে ক্ষণে। কিন্তু কাল সিনেমাটা দেখার পর নিজেকে বড় ভাগ্যবতী মনে 
হয়েছে। কেন? সে আপনারা নিজেরাই 'নির্বাসিত' দেখেশুনে বিচার করবেন আর তার পরেই আপনাদের মরমে ঝিকিয়ে উঠবে সপ্তম আর অষ্টম অক্ষর - 
সত্যিই তো, জন্ম 'রিন', মাতৃ- 'রিন' , পিতৃ - 'রিন' , মাতৃ- ভাষার 'রিন', সেই কী ভোলা যায় ?  

Monday, July 13, 2015

'শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা'
এই যাওয়া আসা,' আসা যাওয়ার মাঝে' দাঁড়িয়ে আমাদের জীবন।
একটি সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র।
কালকেই দেখলাম সিনেমাটা। শুরুতেই প্রায় দু তিন খেপে দেখান হল সিনেমাটি কোন কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে কি কি পুরষ্কার পেয়েছে। জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবেও শব্দ কারুকলা বিভাগে সিনেমাটি বিজয়ী হয়েছে।
তারপর

 শুরু হল

সিনেমা।

আর

আমি ভুলে গেলাম। নিজেকে। নিজের চারপাশ। ঋতুপর্ণ ঘোষ 'সব চরিত্র কাল্পনিক' এ যে যাত্রা শুরু করেছিলেন 'চিত্রাঙ্গদা' এ (যদিও আলোচ্য সিনেমার সঙ্গে এদের বিষয় গত কোন মিল নেই  কিন্তু  আশয় গত মিল আছে; সম্পর্ক) পথের যে বাঁকে পা রেখেছিলেন, সৃজিত এর 'নির্বাক' যেখানে আকাশে উড়তে গিয়েও গোত্তা খেয়ে খেই হারিয়ে আটকে গেল বুড়ো বটের ডালে- সেখান থেকে এই সিনেমার পরিচালক আদিত্য বিক্রম সে্নগুপ্ত শুরু করলেন।

Friday, October 31, 2014

থৈ

পুরনো রিম
পুরনো ঝিম
মেঘলা দিনের পর

পুরনো আন
পুরনো চান
লুকনো চানের ঘর

দিচ্ছি ডুব
দিচ্ছি খুব
পাণ্ডুলিপি থৈ

মরচে রোদ
নিচ্ছে শোধ
ছায়ায় পাতে ছই

তুমিও নাও
তলিয়ে দাও
অতল পরশ-পুর

দেখবে জল
কত সজল
মায়ায় কাঁপায় সুর




সতেরো বাই টু সি

সতেরো বাই টু সি
নেবুতলা রোডের বারান্দা থেকে
এলিয়ে পড়েছে 
এলোকেশী গোলাপের ঢল।

এক পশলা আঙ্গুলে 
তাদের ভিজিয়ে দিলে তুমি,
তারপর
জল নম্র মেঘের মত
নেমে এসে
একটু নিলে শুঁকে

আর আমি নিলাম...

বুকে



Thursday, October 30, 2014

প্রশ্ন উঠতেই পারে, আমি মিত্রালাপ করতে গিয়ে শুরুতেই মেয়ে-পুরের ফিস-ফাস, তত্ত্ব তালাশের খুঁটিনাটি নিয়ে পড়লাম কেন ? কারণটা আর কিছুই নয়,

আমি নিজে একজন মেয়ে, তাই মেয়ে-পুরের হরেক বৃত্তান্ত আমার চোখে এমন করে ভাসে, যেন অচিন- গাঁয়ের সেই ছোট্ট হাজা-মজা নদীতে একদল পাতিহাঁস প্যাঁক প্যাঁক করে ভেসে বেড়াচ্ছে বা আকাশের কোলে ভেসে বেড়াচ্ছে খণ্ড ক্ষুদ্র মেঘের দল।
মেয়ে-পুর
তরুবতী
তার চেয়ে উদ্ভিন্না নারী,
উদ্ভিদ হলে তোর হত উপকার।
রোদ সেঁকে সেঁকে পেতিস শ্বেতসার
পত্র পাতে আহা রে , আহার-
রোদে পুড়ে অমন কালিন্দী কি হতিস ?

বিয়ে না হলেও চলত তখন।
নিষেক করেই হত অভিষেক
দুষ্টু হাওয়ার মিষ্টি নির্বন্ধে

সব্ধ্যে হলেই 
সংটি সেজে রংটি মেখে
চেয়ারে বসে নিচু মুখে
মাঝরাস্তায় উঁচু বুকে
দাঁড়াতে হত না।
বুক ফুলিয়ে একটি পায়ে
দিব্য হতিস খাড়া।

কালবোশেখি লুটিয়ে দিলে পথে
কেমন প্রতি অঙ্গ
জ্বালাত সভ্যতম আগুন
সভ্যতার মূলে 

ধোঁয়ার খোঁপা ঢের ঘনাত
ঝরা পাতার চুলে ...






Wednesday, October 29, 2014

kobita

মেয়ে -পুর
গর্ভ
নারায়ণ ভেসে আছেন জলে।
নাড়ি-সর্প ছত্রাকার করে
নারায়ণ অনন্ত ঘুমোন।
নাভিমূলে মৃণাল মৃন্ময়ী ।
এক হাত গুটনো শঙ্খ;
আর একটি কমল-দল মেলা,
একটি পা গদা ছোঁড়ে জলজ গরাদে
অন্যটি চক্কর কাটে জলে।
সমুদ্রে ভাসে খাদ্যপ্রাণ;
নারায়ণ অচেতনে খেয়ে 
মেদ বাড়ান।

মেদিনী শুধু দিবস গুণে যায়
নিঃস্ব হয়ে বিশ্বরূপ দেখার প্রতীক্ষায়