Monday, July 13, 2015

'শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা'
এই যাওয়া আসা,' আসা যাওয়ার মাঝে' দাঁড়িয়ে আমাদের জীবন।
একটি সাম্প্রতিক চলচ্চিত্র।
কালকেই দেখলাম সিনেমাটা। শুরুতেই প্রায় দু তিন খেপে দেখান হল সিনেমাটি কোন কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে কি কি পুরষ্কার পেয়েছে। জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবেও শব্দ কারুকলা বিভাগে সিনেমাটি বিজয়ী হয়েছে।
তারপর

 শুরু হল

সিনেমা।

আর

আমি ভুলে গেলাম। নিজেকে। নিজের চারপাশ। ঋতুপর্ণ ঘোষ 'সব চরিত্র কাল্পনিক' এ যে যাত্রা শুরু করেছিলেন 'চিত্রাঙ্গদা' এ (যদিও আলোচ্য সিনেমার সঙ্গে এদের বিষয় গত কোন মিল নেই  কিন্তু  আশয় গত মিল আছে; সম্পর্ক) পথের যে বাঁকে পা রেখেছিলেন, সৃজিত এর 'নির্বাক' যেখানে আকাশে উড়তে গিয়েও গোত্তা খেয়ে খেই হারিয়ে আটকে গেল বুড়ো বটের ডালে- সেখান থেকে এই সিনেমার পরিচালক আদিত্য বিক্রম সে্নগুপ্ত শুরু করলেন।
ভাবছেন, একটু বেশীই বাড়াবাড়ি হয়ে গেল? মোটেই না। যাদের অঝোর বরষায় কার্নিশে কাঁপা জ্যাবজ্যাবে কাক দেখলে মন হুহু করে, 'দূরে কোথায়' শুনলে যাদের মন পোয়াতি বেড়ালের মত নরম আর সংহত হয়ে ওঠে , তাদের কথা মোটেই বলছিনা আমি।তাদের কথাই বলছি, যারা বাসের টিকিট ঘড়িতে গুঁজে রাখে, যারা রান্নার পর গ্যাসের টেবিল পেড়ে সেখানেই টান টান করে শুকোতে দেয় তেলচিটে কাপড়ের ফালি, যারা সকাল সন্ধ্যায় জপ- আহ্নিকের মত
পাম্প চালিয়ে ট্যাঙ্কের পেট ভরায়- এ তাদেরই গল্প। গল্প কিছুই নয়। বিশ্ববাজারে অর্থনৈতিক মন্দা, কর্মী ছাঁটাই। গল্পের
নায়কের কোন এক কালে নিশ্চয় ভদ্রদস্তুর একটা চাকরি  ছিল। কিন্তু এখন ছাঁটাই হবার পর সে রাত্রিবেলা একটা খবরের কাগজের ছাপাখানার অফিসে কাজ করে আর তার স্ত্রী দিনের বেলা কাজ করে একটা ব্যাগ তৈরির কারখানায়। স্ত্রী যখন পাখিদের সঙ্গে সূর্যাস্তে কুলায় ফেরে, ততক্ষণে স্বামী সাইকেলে চড়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে। আবার রাতভোর পেরিয়ে সকাল বেলা যখন স্বামী বাড়ি ফেরে, তখন স্ত্রী স্নান সেরে এলোচুলে ব্লাঊজের পিঠ ভিজিয়ে ধূপ জ্বালিয়ে সচন্দন গন্ধ- পুষ্পে দেবী হয়ে গেছে । স্বামীকে এক কাপ চা করে দিয়ে প্লীট করে কপালে একটা টিপ সাঁটিয়েই বেরিয়ে পড়তে হবে তাকে। ব্যাস , এই দু চারটে ধূলিকণা প্রমাণ সময় তাদের আসা যাওয়ার মাঝে। কী ভাবছেন গল্পটা বলেই দিলাম ? উঁহু, কিচ্ছু বলিনি। কিচ্ছু না।  এই গল্প বলা যায় না। এই গল্প দেখতে হয় । মেঘলা ধূসর দুপুরে অলস আলগোছ স্বপ্নের মতো। সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, পায়রার ঝাঁক, লাল মেঝেয় পায়ের জল ছাপ, কাপড় শুকুর দেওয়া, কাপড় তোলা, পাঁচ রকমের সবজি দিয়ে মাছের ঝোল রান্না- এ সবকিছুই আপনারা আগেও দেখেছেন বহুবার; বহু সিনেমায়। কিন্তু এমন করে দেখেননি , হলপ করে বলতে পারি। সর্ষে- সরসতা, মুসুর - মাধুর্য , মশলার কৌটোর অপূর্বতা- আপনারা এমন অনন্ত অপার হয়ে কোনদিনও দেখেননি। তাই গায়ে পড়ে দায়ে পড়ে বলছি,
আজই টিকিট টা কেটে ফেলুন। সিনেমার দিগন্তে আদিত্য কী প্রবল বিক্রমে উদয় হলেন, একবার দেখুন।

আর হ্যাঁ

সিনেমায় কুশীলবদের মুখে কোন কথা নেই। আছে বিষাদ - মধুর দাম্পত্য সানাই। এক কলি রবি ঠাকুর, পড়শিনীর 

জানান, নেতাদের ভাষণ, টুকরো খবর,  শঙ্খ - ঘণ্টা  রব  আর হারানো সুর।

No comments:

Post a Comment